যতই আমরা উন্নতি করি আর মডার্ন হই, কিছু স্বভাব মানুষের আর পালটাল না। সেই ছোট থেকে দেখছি খালি স্বার্থপরতা , অন্যের ব্যপারে নাক গলানো আর কৌতূহল। আর মজার ব্যপার হলো অন্য কেউ বিপদে পড়েছে বা দুঃখে আছে দেখলে যতই মুখে সহানুভূতি দেখাক মনে মনে একটা আনন্দ অনুভব করে আর ভাবে যাক বাবা আমি তো নিরাপদে আছি। খালি আমি আমি করেই গেল। নিজে ভালো থাকব ভালো খাব বড় ফ্ল্যাট কিনব বড় গাড়ি কিনব ছেলে মেয়ে ভালো স্কুলএ পড়বে। নিজের ভালো কে না চায় কিন্তু শুধু কি নিজের ভাল তা নয়, অন্য সকলের চেয়ে ভালো হতে হবে , সবাইকে টেক্কা দিয়ে বেস্ট হতে হবে।
ছোটবেলায় মনে আছে পরীক্ষার পর রেসাল্ট বেরোনোর দিন আমার বাবা মা এর চেয়ে কৌতুহলী হত আম্তীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশী । কি জ্বালা, আমার পরীক্ষা খারাপ হলো না ভালো হলো সেটা আমি বা আমার বাড়ির লোক বুঝবে অন্যের কিসের এত কৌতূহল আমি কোনো দিনই বুঝি নি। এমনো দেখেছি, ফোন করে খবর নিচ্ছে কোন বিষয় কত নম্বর পেলাম। এখন বুঝি আসলে মিলিয়ে দেখা নিজের ছেলে মেয়ের থেকে খারাপ হলো না ভালো হলো। খারাপ হলে দারুণ আনন্দ আর ভালো হলে বেশি কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দেওয়া। এত গেল স্কুলএ পড়া কালীন আর বোর্ড এর পরীক্ষার সময় আর দেখতে হবে না। কোন আম্তিয়ের ছেলে বা মেয়ে বা কোন প্রতিবেশীর ছেলে এবারে মাধ্যমিক বা উচ্ছ মাধ্যমিক দিচ্ছে একেবারে খুঁজে খুঁজে বার করা। তার পর সে সাইন্স পড়বে না কমার্স পড়বে না আর্টস পড়বে , সে নিয়ে কি মাথা ব্যথা। সাইন্স না পড়লে কি আর জীবনে উন্নতি হবে? কমার্স বা আর্টস পড়ে হবে টা কি?এসব মন্তব্য অনেক শুনেছি। সাইন্স পড়ে জয়েন্ট দিয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে নাহলে যে মা বাবার মান সম্মান রইলো না। আরে বাবা জয়েন্ট না পেলে তো আবার জীবন বৃথা। জেনারেল লাইনএ পড়ে হবে টা কি ? দাঁড়াতে যে অনেক সময় লাগবে। আচ্ছা আমি কখন কি ভাবে দাঁড়াব না বসব তা তে আরেক জনের কি এলো গেল বুঝি না । স্কুল পেড়িয়ে কলেজ বা হায়ার এডুকেসনেও চলে নানান মন্তব্য আর টিটকারী।
এত গেল ছাত্র জীবন, এর পর কর্ম জীবনেও শান্তি নেই। কার ছেলে মেয়ে কত আগে চাকরি পেল কত টাকার প্যাকেজ, উফ এই নিয়ে বাবা মাদের কি কম্পিটিসন। সব সময় ঠিক বয়সে সব ঠিক ঠিক হতে হবে। তাই চাকরির পরেই চলে এলো বিয়ের প্রস্তাব। মেয়ে সাতাশ বছর বয়স হয়ে গেল, বিয়ে দেবেন না? নাকি নিজেই ঠিক করে রেখেছে? তা পাত্রটি কে ? কলেজের বন্ধু নাকি এক অফিসেই চাকরি করে ? এটা হলো যে কোনো মাকে, যার মেয়ের বয়স সাতাশ বা আঠাশ হয়ে গাছে, যে কোনো বিয়ে বাড়ি বা অনুষ্ঠান বাড়িতে কোনো না কোনো কাকিমা মাসীমা বা পিসিমা জিগ্গেস করবেই। আচ্ছা কেউ তো বিয়ে নাই করতে পারে। সেটা জানতে পারলে তো আর কৌতূহলের শেষ থাকবে না। যতক্ষণ না অন্যকে আড়ালে গিয়ে ফিসফিস করে খবরটা দিতে পারছে ততক্ষণ কোনো খাবারি হজম হবে না। শুধু মেয়ে কেন ছেলের মায়েদেরও এই প্রশ্নের উত্তরের মুখোমুখি হতে হয় বই কি। আচ্ছা এত কৌতূহলের কি আছে, কে কখন কা কে বিয়ে করলো কি না করলো সে তো নেমন্তন্ন পেলেই জানা যাবে। নিজের ছেলে মেয়ের বিয়ের জন্য নিজের বাবা মার যতনা মাথা ব্যথা তার চেয়ে ঢের বেশী চিন্তা পাড়া প্রতিবেশী ও আম্তীয় স্বজনের।
আচ্ছা বিয়ে না হয় হলো কিন্তু বিয়ের পর দু তিন বছরের মধ্যে যদি আবার ছেলে পুলে না হয় তাহলে তো তাদের ঘুম চলে যাবার অবস্থা। নিজে থেকে ডেকে জিগ্গেস করবে, কি কোনো প্রবলেম আছে নাকি? আজকাল অনেক ট্রিটমেন্ট হয় ভালো ডাক্তার ও আছে অনকে। আচ্ছা আমরা নিজেদের সভ্য বলি কি করে? এ ধরনের ব্যক্তিগত এবং সেন্সিটিভ ব্যপার গুলো নিয়ে মানুষ কি করে অন্যের সম্পর্কে এত কৌতূহলী হয়? আমার পরম বন্ধুকেও আমি কোনদিন এই ধরণের প্রশ্ন করব না যদি না সে নিজে থেকে তার সমস্যার কথা আমার সঙ্গে শেয়ার করতে চায়। আমার মনে হয় এই ধরণের প্রশ্ন যারা করে তারা সামনের জনকে শুধু মাত্র দুঃখ - বেদনা দিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে চায়।
আবার কোনো মেয়ে যদি তার সন্তান জন্মানোর পর নিজের চাকরি বা কেরিযার ছেড়ে দিয়ে ঘর সংসার করে তাতেও সমস্যা। এত পড়াশুনো শিখে কি লাভ হলো ? সারা জীবন কি রান্না বান্না আর ঘরের কাজই করবে? আরে বাবা যার জীবন তাকে ভাবতে দাও না, সে কি করবে না করবে সেটা তার ব্যপার। যদি কেউ সেটা করেই আনন্দ পায়ে তা তে ক্ষতি কি? আর ভবিষ্যতেই বা সে কি করবে সে তো সময় হলেই জানতে পারবে এত তাড়া কিসের ?
তবে এখানেই শেষ নয়, অন্যের জীবনে প্রতি নিয়ত কি ঘটছে সেটা জানার ইছের কোনো শেষ নেই। অন্যের ব্যপারে নাক গলানো আর অতরিক্ত কৌতূহল মানুষের এমন একটা স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে যে,মাঝে মাঝে সে ভুলে যায় যে তার এই স্ব্ভাবের জন্য অন্য একজন বিরক্তও হতে পারে আবার দুঃখও পেতে পারে । কেন জানিনা মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষ ছাড়া অন্য জীব জন্তুরাও কি এত কৌতূহলী? নিশ্চই না , তাই তো আজ আমরা মানব সভ্যতাকে নিয়ে এত গর্বিত।
তবে এখানেই শেষ নয়, অন্যের জীবনে প্রতি নিয়ত কি ঘটছে সেটা জানার ইছের কোনো শেষ নেই। অন্যের ব্যপারে নাক গলানো আর অতরিক্ত কৌতূহল মানুষের এমন একটা স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে যে,মাঝে মাঝে সে ভুলে যায় যে তার এই স্ব্ভাবের জন্য অন্য একজন বিরক্তও হতে পারে আবার দুঃখও পেতে পারে । কেন জানিনা মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষ ছাড়া অন্য জীব জন্তুরাও কি এত কৌতূহলী? নিশ্চই না , তাই তো আজ আমরা মানব সভ্যতাকে নিয়ে এত গর্বিত।
No comments:
Post a Comment