Wednesday 5 October 2016

পুজোর টানে

পুজো মানে শিউলি কাশ
রেডিও তে মহালয়া
পুজো মানে ঢাকের আওয়াজ     
নতুন জামা পড়া 
পুজো মানে দেদার আড্ডা 
প্রচুর খাওয়া দাওয়া ...........

পুজো মানে মন খারাপ 
আর কলকাতা কে মিস করা !!!

হ্যাঁ, এবারও প্রতিবারের মতন নিজের শহর, সেই তিলোত্তমা কলকাতা,  যেখানে জন্মেছি আর কেটেছে জীবনের অনেক গুলো বছর, ভীষণ ভাবে মিস করছি।  দূর্গা পুজো নিয়ে বাঙালির যে উত্ত্বেজনা, যে উন্মাদনা, যে আনন্দ, সব কিছু থেকে নিজেকে খুব বঞ্চিত বলে মনে হচ্ছে আজ।

ছোটবেলায় দূর্গা পূজা বা শরৎ কাল নিয়ে লিখেছিলাম অনেক রচনা। আজ খুব ইচ্ছে করলো পুজো নিয়ে কিছু লিখি কিন্তু লিখতে বসে মন খারাপটাই  বেশি হলো  আর তাই লেখাটা হয়ে গেলো ছন্নছাড়া।

পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে  গেলো।  মনে পড়ে  গেলো সেই উৎসবমুখর দিনগুলো যখন মহালয়া  থেকেই স্কুল হয়ে যেত ছুটি আর এক মাস শুধু আনন্দ আর আনন্দ।  পুজো শুরু হবার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত চার দিনের প্ল্যানিং। ছোট থেকেই রেডিও তে গান বা নাটক শুনতে ভীষণ ভালোবাসি তাই ভোর চারটের সময় উঠে রেডিওতে মহালয়া কোনো দিন মিস করিনি। 

যবে থেকে পাড়ায় পুজোর লাইট জ্বলতে শুরু করতো তবে থেকেই মনটা কেমন আনন্দে ভোরে যেত।বাড়ির সামনেই একটি দূর্গা পুজো হতো বলা ভালো এখনো হয়। ষষ্ঠীর  দিন ভোরবেলা ঘুম ভাঙতো ঢাকের আওয়াজে।
মা এর মামার বাড়ি উত্তর কলকাতার গিরিশ পার্কে এবং সেখানে দূর্গা পুজো হয়।  পুজোটা কয়েকশো বছর পুরোনো হবে।  ছোট বেলায় প্রতি অষ্টমীতে সেখানেই যাওয়া হতো।  সকাল বেলায় অঞ্জলি দেওয়া থেকে শুরু করে, ভোগ খাওয়া এবং সন্ধি পুজো অবধি দিনটা সেখানেই কেটে যেত। ষষ্ঠীর  দিন রাতে বাবা গাড়ি করে বিভিন্ন্য প্যান্ডেল ঘোরাতো , সপ্তমীটা থাকতো বন্ধুদের জন্য আর নবমীতে বাড়িতে আসতো কোনো গেস্ট। দশমীতে হতো হুল্লোড়। পিসিরা কাকারা সবাই আসতো দাদু ঠাকুমা কে প্রণাম করতে আর সকাল থেকেই বাড়ি গমগম করতো। সঙ্গে চলতো মা, কাকিমা আর পিসিদের হাতের দারুণ সব রান্না,খাওয়া-দাওয়া আর প্রচুর আড্ডা। তার পর সন্ধেবেলা সবাই কে প্রণাম করে জুটতো পাড়ার মিষ্টির দোকানের চন্দ্রপুলি আর মিহিদানা। 

২০০২ সাল থেকে আর কলকাতার দূর্গা পুজো দেখা হয়নি। মাঝে তিন বছর ছিলাম তার পর আবার ২০০৮ সাল থেকে কলকাতার বাইরে পুজো কেটেছে। পশ্চিম বঙ্গের বাইরে এমন কি দেশের বাইরেও দূর্গা পুজো কাটিয়েছি কিন্তু কোথাও যেন মিস করি নিজের শহরের পুজোর সেই গন্ধটা।

আজ যতই সাজ-গোজ করি আর হৈ  হুল্লোড় করি,  মিস করি সেই রেডিওতে মহালয়া শোনা, ঢাকের আওয়াজে ঘুম ভাঙা, পাড়ার দোকানের সেই চন্দ্রপুলি-মিহিদানা আর উৎসবের দিনে প্রিয়জনদের কাছে পাওয়া। 

আগে খারাপ লাগাটা এতো প্রবল ছিলোনা, কিন্তু যত বয়স বাড়ছে খারাপ লাগাটাও বাড়ছে। একেই বলে বোধ হয় শিকড়ের টান।