Sunday 10 May 2020

আমার মা

 মায়ের জন্য কোন আলাদা দিন বা দিবসের প্ৰয়োজন পরে না।  মা কে মনে করতে বা ভালবাসতে হলে মাতৃ দিবস পালন করতে হয় না।  তবুও মনে হল, যে মানুষটির জন্য আজ আমার অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে , যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ আমি বড় হলাম, তাকে নিয়ে দু চার কথা আজ লিখতে ইচ্ছে করল।  
ছোট থেকেই আমি বড্ড বেশি 'মা' 'মা' করি।  মা যেহেতু স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন , এখনো মনে আছে আমি তখনো স্কুলে ভর্তি হইনি , তাই প্রতিদিন মা  যখন স্কুলে চলে যেত ভোরবেলা আমি কাঁদতাম আর প্রতিদিন আমার ঠাকুমা আমার কান্না থামাতো।  তার পর মা যখন স্কুল থেকে ফিরে আসত , তখন কি আনন্দই না হত।   তারপর যখন স্কুলে ভর্তি হলাম , একটু বড় হলাম , তখন আবার স্কুল থেকে ফিরে বাড়িতে মা কে দেখতে না পেলে খুব রাগ হত।  এখনো মনে পড়ে বেশ অনেক বড় বয়স অবধি আমি কোথাও থেকে বাড়ি ফিরে যদি মা কে দেখতে না পেতাম খুব রাগ হত  আর কষ্ট পেতাম।  
ছোট থেকেই মায়ের কাছে আর যাই কর পড়াশুনো করাটা ছিল খুব ইম্পরট্যান্ট। সন্ধেবেলা ঘড়িতে ৬ টা  বাজা  মানেই বই খাতা নিয়ে পড়তে বসে যাওয়া। আর ছোট থেকেই আমি খুব ফাঁকি বাজে ছিলাম , পড়াশোনাটা যতটা কম করা যায় আরকি। এই নিয়ে কম বকুনি খাইনি।  তাই সব সময় বলতাম ' উফ , কারুর মা যেন স্কুল টিচার না হয় '........ শুধু পড়ার বই নয় , গল্পের বই থেকে শুরু করে যেকোন ম্যাগাজিন পড়ার নেশা আছে মায়ের। প্রতি বছর বই মেলা থেকে অনেক বই কিনে দিত, যাতে আমার আর দিদির মধ্যেও বই পড়ার ভালবাসাটা জন্মায়।  
আজ  বুঝতে পারি  পড়াশোনার প্রতি যেটুকু ভালবাসা জন্মেছে তা , মায়ের জন্যই। এখনো মা পড়াশুনো নিয়ে থাকতে ভালোবাসে।  এখনো দেখি অবসর সময় মা হয় বই পড়ছে বা খবরের কাগজ।  এখনো মা সারাদিন খবরের কাগজের শব্দ-জব্দ করে সময় কাটায়।  বাংলা পড়তে গিয়ে এখনো যখন কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় , মা ই একমাত্র ভরসা।  
সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয় ছিল মা আমাদের খুব বিশ্বাস করত।  মাকে ভয় পেলেও বন্ধুর মতন সব কথা মায়ের সঙ্গে শেয়ার করতাম।  এখনো সেই অভ্যাসটা  রয়ে গেছে।  
আজ মা আছে বলেই অনেক বাধা বিঘ্ন ও সমস্যার মধ্যেও আমি আমার প্রফেশন করতে পারছি।  দীর্ঘ সময় ছেলেকে বাড়িতে রেখে বাইরে কর্মরত থাকতে পারছি কেবল মায়ের জন্যই।  জানি আমার থেকেও মা বেশি খেয়াল রাখবে ওর ।  
আজ যেটুকু যা হতে পেরেছি তা কেবল বাবা মায়ের জন্য।  বাবার অবদানও কিছু কম নয়।  মাতৃ দিবস বলে যে শুধু মায়ের কথাই বলবা তা নয়।  
তবে মায়ের জায়গা কেও  কোনদিন নিতে পারবে না।  মায়ের ভূমিকা আমার জীবনে যা, তা দু চার কথায় লিখে ব্যক্ত করা অসম্ভব।  
আমার মা ই আমার  অনুপ্রেরণা । যদিও অসম্ভব তবুও চাইবো মা চিরটাকাল যেন আমার সঙ্গে থাকে।      

No comments:

Post a Comment